ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে তার বিপরীতে ঋণ নিয়েছিলেন ২৫ কোটি টাকা। সেই টাকা আবার পাচার করেছেন বিদেশে। এমন অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১-এর উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ।
মামলায় বলা হয়- সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান ও তার স্বজনরা যোগসাজশ করে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান খুলে গম-ছোলা আমদানির নামে তাদের পারিবারিক মালিকানায় থাকা ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ‘টাইম লোন’ নিয়ে সেই টাকা পাচার করেছেন।
দুদকের দায়ের করা মামলায় সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ছাড়াও তার স্ত্রী ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান, ভাই ও সাবেক পরিচালক আসিজ্জামান চৌধুরী ও বোন রোকসানা জামান চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন- ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ, আফরোজা জামান, সৈয়দ কামরুজ্জামান, মো. শাহ আলম, মো. জোনাইদ শফিক, অপরূপ চৌধুরী, তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান, ইউনুছ আহমদ, হাজী আবু কালাম, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান এমএ সবুর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী।
ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন- মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ, আবদুল হামিদ চৌধুরী, আবদুর রউফ চৌধুরী, জিয়াউল করিম খান, মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন ও বজল আহমেদ বাবুল।
জাবেদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মোহাম্মদ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী, কাজী মোহাম্মদ দিলদার আলম, মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম, আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মেহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী, ইয়াছিনুর রহমান, ইউছুফ চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়- ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখায় ভিশন ট্রেডিংয়ের পক্ষ থেকে একটি হিসেব খোলা হয়। ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করা হয়। গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ১৮০ দিনের মধ্যে ফেরতযোগ্য ‘টাইম লোন’ হিসেবে ঋণ মঞ্জুরের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ইউসিবিএল ব্যাংকের ‘করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশন ও ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের’ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ওই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে ২০২০ সালের ৮ মার্চ ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে।
আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাকে আর পরবর্তী সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দেখা যায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগমুহূর্তে জাবেদ স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনে চলে যান।
দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১-এর ডিডি সুবেল আহমেদ যুগান্তরকে জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন এবং অন্য আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে প্রথমে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান খুলে ভুয়া নথিপত্র দিয়ে একটি ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।